পদ্মা সেতুর ৩৬তম স্প্যান (১-বি) পিলার ২ ও ৩ নম্বরের উপর বসানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সেতুর দৃশ্যমান হল ৫৪০০ মিটার জানান পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের।
আজ দেশি-বিদেশী দক্ষ প্রকৌশলীদের চেষ্টায় সকাল ৯.৪২ মিনিটে পিলারের উপর স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে স্প্যানটি। ৩৬তম স্প্যান বসানোর পর আর মাত্র বাকি রইল ৫টি স্প্যান বসানো। ৩৫ তম স্প্যান বসানোর ৪দিন পর বসানো হলো ৩৬তম স্প্যান। বসানো ৫৪০০ মিটারের সাথে আর ৭৫০ মিটার বসানো হলেই ৬১৫০ মিটারের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শতভাগ দৃশ্যমান হবে।
৩৬ তম স্প্যান বসানোর জন্য বুধবার সকাল থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে নদীর নাব্যতা পরীক্ষা সহ আনুসঙ্গিক প্রস্তুতি কাজ শুরু করে বিকেলে স্প্যান ভাসমান ক্রেনে বাধাঁ হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মাওয়ার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ‘তিয়ান ই’ নামের ভাসমান জাহাজটি স্প্যানটি নিয়ে রওয়ানা হয়। দুই ঘন্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় স্প্যানটি নিয়ে খুঁটির কাছে পৌঁছায়। নদী তীরবর্তী পিলার হওয়ায় কোথাও কোথাও পর্যাপ্ত গভীরতা না থাকায় বেশি সময় লেগেছে পৌঁছতে। পরে খুটির উপরে তোলার চেষ্টা সহ একবার উপরে নিলেও টেকনিক্যাল কারনে বৃহস্পতিবার স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। তাই ওই দিন ক্রেনটিকে পিলারের কাছেই অবস্থান করে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, আজ সকাল ৮টায় স্প্যান বসানো শুরু হয়।
পদ্মাসেতুর মূল সেতুর প্রকৌশলীরা জানান, গতকাল স্প্যানটি ২ ও ৩নং পিলারের নিকট নোঙর করে রাখা ছিল। আজ দুই পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে পজিশনিং করা হয়। অত:পর ক্রেনের সহায়তায় স্প্যানটিকে পিলারের উপর উঠানো হয় রাখা হয় দুই পিলারের উপর বিয়ারিং এর উপর। আজ থেকে পিলার ৩ ও ৪ এর উপর স্থাপিত স্প্যানের সঙ্গে ঝালাই করার কাজ শুরু হবে তা তা করতে কিছু দিন সময় লাগবে।
পদ্মা সেতুর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেনে স্প্যান (১-বি) পিলার ২ ও ৩ নং নম্বরে পৌঁছায় বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তার পর স্প্যানটি পিলারের কাছেই নোঙর করে রাখা হয়। আজ সকাল ৮টায় স্প্যানটিকে তুলে ২ ঘন্টার মধ্যে সকাল ১০টায় স্প্যানটিকে সফল ভাবে বসানো হয়।
আর ৩৬ তম স্প্যানটি বসানো পর পদ্মা সেতুর ৫.৪০০ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। ইতিপূর্বে অক্টোবর মাসের ১১ তারিখ ৩২তম স্প্যান, ১৯ তারিখ ৩৩তম স্প্যান ২৫ তারিখ ৩৪তম স্প্যান ও ৩১ তারিখ শনিবার ৩৫তম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) বসানো হয়। ৩৪নং স্প্যান বসাতে বৈরি আবহাওয়া আর ৩৫ নং বসাতে নাব্যতা সংকট আর ৩৬ তম স্প্যান বসাতে কারিগরি জটিলতার কারনে প্রত্যেকটি বসাতে ১দিন বিলম্ব হয়েছে বলে জানান পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা।
অক্টোবর মাসে ৪টি স্প্যান বসানো হয়েছে। চলতি মাসেও ৪ বসানো হবে যা আজ পিলার ২ ও ৩ নম্বরে স্প্যান ১-বি বসানোর পর আগামি ১১ নবেম্বর পিলার ৯ ও ১০ নম্বরে ৩৭তম স্প্যান (স্প্যান ২-সি), ১৬ নবেম্বর পিলার ১ ও ২ নম্বরে ৩৮তম স্প্যান (স্প্যান ১-এ), ২৩ নবেম্বর পিলার ১০ ও ১১ নম্বরে ৩৯তম স্প্যান (স্প্যান ২-ডি), ২ ডিসেম্বর পিলার ১১ ও ১২ নম্বরে ৪০তম স্প্যান (স্প্যান ২-ই) ও ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ ৪১ নম্বর স্প্যান (স্প্যান ২-এফ) বসবে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হবে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান শুরু হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৩৫টি স্প্যান। ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সবকটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। বাকি স্প্যান গুলো পিলারের উপর উঠানোর জন্য প্রস্তুত করা আছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
৬ দশমিক ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
Leave a Reply