রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বুধবার ‘দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ’ ফোনালাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে আলোচনা শুরুর বিষয়ে উভয়েই সম্মত হয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘অতি দ্রুত আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছেন’। তারা একে অপরকে নিজেদের রাজধানী সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। পরে তিনি বলেন, ‘স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য শান্তির’ বিষয়ে আলাপ করেছেন তিনি।

যুদ্ধরত দুটি দেশের কাছ থেকে এমন এক সময় এই আহ্বান এলো যখন ট্রাম্প এবং তার প্রতিরক্ষা সচিব দুইজনই বলেছেন ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের সম্ভাবনা কম। যেটি কিয়েভের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

জেলেনস্কি বলেছেন, শুক্রবার মিউনিখে ইউক্রেন সংক্রান্ত এক প্রতিরক্ষা শীর্ষ সম্মেলনের সময় তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং স্টেট সেক্রেটারি মার্কো রুবিও’র সাথে দেখা করবেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্প আরও লিখেছেন, “এখনই এই নৃশংস যুদ্ধ বন্ধ করার সময় এসেছে, যেখানে ব্যাপক এবং সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় ‘মৃত্যু এবং ধ্বংসযজ্ঞ’ হয়েছে। বিধাতা রাশিয়া এবং ইউক্রেনের জনগণের মঙ্গল করুন!”

পুতিনের সাথে কবে সরাসরি সাক্ষাৎ হবে তা জানাননি ট্রাম্প। তবে পরে তিনি এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সৌদি আরবে দেখা করবো।”

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “একসাথে কাজ করার সময় এসেছে–– ট্রাম্পের এই ধারণাকে সমর্থন করেন পুতিন।”

পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ফোনালাপ চলে বলেও জানান পেসকভ।

ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনের ২০১৪ সালের আগের সীমান্তে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ওই জমির কিছু অংশ ফিরে আসবে।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন তিনি তার ডিফেন্স সেক্রেটারি পিট হেগসেথের সাথে একমত। যিনি বুধবার ন্যাটো সম্মেলনের শুরুতে বলেছিলেন যে ইউক্রেনের সামরিক জোটে যোগদানের কোনো সম্ভাবনা নেই।

“আমি মনে করি এটা সম্ভবত সত্য,” বলেন ট্রাম্প ।

যুক্তরাজ্যের সরকার জানিয়েছে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরোধে সমর্থন অব্যাহত রাখবে।

উপ-প্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রাইনার আইটিভি-কে বলেছেন, কিয়েভের প্রতি লন্ডনের সমর্থন আগের মতোই “দায়িত্বপূর্ণ” থাকবে।

বিবিসির জেমস ওয়াটার হাউস ইউক্রেনের রাজধানীর পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন, হেগসেথের ভাষণ কিয়েভের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা হবে।

যদিও এটি দীর্ঘদিন ধরেই জানা যে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন তার পূর্বসূরিদের তুলনায় ইউক্রেনের প্রতি কম সহানুভূতিশীল ছিল, হেগসেথের প্রতিটি বক্তব্য সম্ভবত শুধু মস্কোকে খুশি করেছে।

জেলেনস্কি বারবার যুক্তি দিয়েছেন, “ইউক্রেন ছাড়া ইউক্রেন নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না।”

কিন্তু ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপটি তার অনুপস্থিতিতেই হয়েছিল।

জেলেনস্কি বলেছেন, ট্রাম্পের সাথে তার ফোনালাপ বিভিন্ন বিষয়ে “ভালো এবং বিস্তারিত আলোচনা” হয়েছে।

তিনি কিয়েভ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সাথেও দেখা করেছেন।

বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।

“ইউক্রেনের চেয়ে বেশি শান্তি আর কেউ চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একসঙ্গে আমরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ করতে এবং একটি স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য শান্তি নিশ্চিত করতে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নির্ধারণ করছি,” মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি।

এই ইউক্রেনীয় নেতা আরও বলেছেন, “আমরা যোগাযোগ রক্ষা করতে এবং আসন্ন বৈঠকের পরিকল্পনা করতে রাজি হয়েছি।”

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের নেতাদের মধ্যে এই ফোনালাপ এক ঘণ্টা ধরে হয়েছে।

মঙ্গলবার দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি পরামর্শ দিয়েছিলেন, শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল রাশিয়ার পশ্চিম কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের সাথে বিনিময় করা যেতে পারে।

যদিও পুতিনের মুখপাত্র পেসকভ বলেছেন এটি ‘অসম্ভব’।

“রাশিয়া কখনও তার ভূ-খণ্ড বিনিময় নিয়ে আলোচনা করেনি এবং আলোচনা করবেও না। ইউক্রেনিয়ান ইউনিটগুলোকে এই ভূ-খণ্ড থেকে বহিষ্কার করা হবে। যারা যাবে না তাদের সকলকে বহিষ্কার করা হবে ” বলেন পেসকভ।

জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, কেবল ইউরোপীয় দেশগুলো নয়, যুক্তরাষ্ট্রকেও তার দেশের জন্য যে কোনো নিরাপত্তা প্যাকেজের অংশ হতে হবে।

“যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিরাপত্তার প্রকৃত নিশ্চয়তা নয়” বলেন তিনি।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশ-পন্থী প্রেসিডেন্ট উৎখাতের পর কৃষ্ণ সাগরীয় উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে নিজের সাথে যুক্ত করে মস্কো। তারা পূর্ব ইউক্রেনে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে রুশ-পন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরও সমর্থন করে।

প্রায় তিন বছর আগে যখন রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে তখন এই সংঘর্ষ সর্বাত্মক যুদ্ধে মোড় নেয়।

কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য মস্কোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়ান বাহিনী পূর্ব ও দক্ষিণে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করেছে এবং দেশজুড়ে বিমান হামলা চালিয়েছে।

ইউক্রেন কামান ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিয়েছে পাশাপাশি রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে স্থল অভিযানও চালিয়েছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই সরকারের গোপনীয়তার কারণে হতাহতের সঠিক সংখ্যা পাওয়া কঠিন।

তবে অনুমান করা হয় হাজার হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই সৈনিক নিহত বা আহত হয়েছেন। লাখ লাখ ইউক্রেনিয়ান মানুষ শরণার্থী হিসেবে পালিয়ে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *