টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে প্রথমে সখ্য গড়ে তোলেন মা–মেয়ে। এরপর একদিন অপহরণের নাটক সাজিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। সেই টাকা না পেলে অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টার মামলা দিয়ে করা হয় হয়রানি। শেষপর্যন্ত ঝামেলা এড়াতে কেউ কেউ টাকা দিয়ে রেহাই পান। এভাবে প্রতারণার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর নিউমার্কেট থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– বিথী হাওয়া ওরফে বিবি হাওয়া ও তার মেয়ে সুরভী সুলতানা। সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন সমকালকে বলেন, নিউমার্কেট এলাকার মিনিতা প্লাজা শপিং সেন্টারের একটি ঘড়ির দোকানের মালিক সৈকত আলীকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন মা–মেয়ে। প্রতারণার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগেও তারা বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাদের করা অন্তত তিনটি প্রতারণা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

নিউমার্কেট থানা সূত্রে জানা যায়, অপহরণের নাটক সাজিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে ৭ এপ্রিল নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা হয়। এজাহারে বলা হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে সৈকতের দোকানে ঘড়ি কিনতে এলে মা–মেয়ের সঙ্গে সৈকতের স্ত্রীর পরিচয় হয়। ওই সময় সৈকতের স্ত্রীকে ‘নিজের মেয়ে’ বলে সম্বোধন করেন বিথী। পরে মোবাইল ফোনে তাদের যোগাযোগ হয়। ২০ মার্চ বিথী সৈকতের দোকানে যান। তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, তাই মেয়ে সুরভীকে বিক্রয়কর্মী হিসেবে দোকানে কাজে নেওয়ার অনুরোধ করেন। ২১ মার্চ সুরভী কাজে যোগ দেন। তবে আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় সৈকত তাকে দোকানে আসতে নিষেধ করেন। তারপরও ২২ মার্চ তিনি দোকানে যান। কিছু সময় পর অসুস্থতার কথা বলেন। বিকেল ৫টায় তাকে বাসে তুলে দেন সৈকত। সেদিন রাত ৮টার দিকে বিথী মোবাইল ফোনে কল দিয়ে সৈকতকে জানান, তাঁর মেয়ে সুরভী বাসায় পৌঁছেনি এবং তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এর কিছু সময় পর বিথী আবারও কল করে জানান, তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করেছে। সুরভী যেহেতু সৈকতের দোকানে কাজ করতে গিয়ে অপহৃত হয়েছে, তাই তাকেই মুক্তিপণের টাকা দিতে হবে। পরদিন দুপুরে সুরভী ফোন করে জানান, তিনি কৌশলে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এসেছেন। তখন আবার অপরিচিত একটি ফোন নম্বর থেকে কল করে সৈকতের স্ত্রীকে বলা হয়, বিথীকে অপহরণ করা হয়েছে। সৈকতের স্ত্রী গেলে তাকে উদ্ধার করে আনতে পারবেন। সৈকতের স্ত্রী ঘটনাস্থলে যেতে না চাইলে তাকে ফোন করে ভয় দেখানো হয় এবং ২০ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়।

পুলিশ জানায়, ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই সৈকতের পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ খোঁজ নিতে গিয়ে প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করে। এর মধ্যে সৈকতের কাছ থেকে টাকা না পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণচেষ্টা মামলা করতে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন মা–মেয়ে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পুলিশ ফাঁসানোর চেষ্টার বিষয়ে নিশ্চিত হয়। জানা যায়, অপহরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সব ছিল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল। তখন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা নিজেদের অপরাধসংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *