হজম ভালো হলে ওজন কমবে। এ জন্য কিছু বিষয় অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে কিছু বিষয় অনুসরণ করলে হজম ভালো হবে।
শেয়ার করুন
ফলো করুন
ওজন কমানো নিয়ে সারা বিশ্বে রয়েছে নানা তত্ত্ব ও মতামত। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাচ্ছেন, শরীর চর্চাও করছেন, তবু কমছে না ওজন। বরং এক জায়গায় আটকে আছে কিংবা ওজন উল্টো বাড়ছে। কারণটা কী হতে পারে? কিছু একটা ভুল হয়তো করছেন আপনি। খাওয়ার পর কিছু ভুল পদক্ষেপে হতে পারে এটা। জেনে নেওয়া যাক এমন সাতটি ভুলের কথা।
অনেকেই আছেন, খাবার শেষ করতে না করতেই এক গ্লাস পানি পান করে ফেলেন। এটা খুবই ক্ষতিকর অভ্যাস। এতে হজমপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। ফলে বেড়ে যায় ওজন। অনেকেই আছেন খাওয়ার সময় একটু পরপর পানি পান করেন, যেটা খুবই খারাপ অভ্যাস। এতে পাকস্থলীতে খাবার প্রবেশ করার পর ওই সময় নিঃসৃত পাচক রসকে এই পানি দ্রবীভূত করে ফেলে। ফলে খাবারের হজমপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। এ জন্য খাওয়ার অন্তত আধঘণ্টা পর পানি পান করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় খাওয়ার আধঘণ্টা আগে এক গ্লাস পানি পান করলে। এতে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে, পেট ভরে খাওয়া হবে না, যা হজমকে সহজ করবে। অনেকেরই খাওয়ার ঠিক পরপর ওষুধ খেতে হতে পারে কিংবা মুখ পরিষ্কার করার জন্য অনেকে পানি পান করেন। সে ক্ষেত্রে হালকা কুসুম গরম পানি পান করা শ্রেয়।
খাওয়ার পরপরই ফল খাওয়া
ভারী খাবার খাওয়ার পর পরপরই ফল খাওয়া উচিত নয়
যেকোনো ভারী খাবার খাওয়ার পর মানে দুপুর বা রাতের খাবারের পরপরই কখনোই ফল খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এতে পেটে গ্যাস সৃষ্টি হয়, যা হজমপ্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। ফলে থাকা সুক্রোজ রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময় হচ্ছে দুটি বড় আহারের মাঝখানের সময়। যেমন সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের মাঝে কিংবা বিকেলের নাশতায়।
ভারি খাবার খাওয়ার পর দুধ চা খেলে হজম ব্যহত হয়
দুধ চা খেলে পেটে গিয়ে সেটা অ্যাসিডে পরিণত হয়। আপনি মাছ, মাংস, ডাল ইত্যাদি প্রোটিন খেয়ে থাকলে এই অ্যাসিড হজমে বাধা দেবে। ফলে হজম ব্যাহত করে ওজন কমানোর অন্তরায় হবে। তাই খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা বা দুই ঘণ্টা পর দুধ চা পান করা যেতে পারে।
খাওয়ার পর গোসল করা উচিৎ নয়
অনেকেই খাওয়ার পরপর গোসল করেন। এটাও খাবার হজমে বাধা হতে পারে। কারণ, খাওয়ার পর শক্তি উৎপাদনের জন্য রক্তপ্রবাহের প্রয়োজন। গোসল করলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। ফলে হজমপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তাই ভারী খাবার খাওয়ার আগে গোসল করা বা খাওয়ার ঘণ্টা খানেক পর গোসল করা যেতে পারে।
খাওয়ার পরপরই বিছানায় যাওয়া
অনেকেই রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে যান বা বসে থাকেন। এতে আপনার হজমপ্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এতে বদহজমের সমস্যা হতে পারে। এ জন্য খাওয়ার পরপর কখনোই শুতে যাওয়া কিংবা বসে থাকা উচিত নয়। রাতের খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর শুতে যাওয়া ভালো। দুপুরের খাবারের পর পাওয়ার ন্যাপ বা দিবানিদ্রা নিতে পারেন, তবে সেটা অল্প সময়ের জন্য। শোবার সময় বাঁ দিকে কাত হয়ে শোবেন। কারণ, অ্যানাটমিক্যালি আমাদের পাকস্থলী ডান দিকে থাকে। ফলে বাঁ দিকে কাত হয়ে শুলে ডান দিকের নাসারন্ধ্র দিয়ে অক্সিজেন ঢুকবে এবং পাকস্থলীতে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়বে, যা খাবার হজমকে ত্বরান্বিত করবে।
আঁটোসাঁটো পোশাক পরে খাওয়া
দুপুরে বা রাতে খাবার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাঞ্ছনীয়
দুপুরে বা রাতে খাবার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাঞ্ছনীয়
রাতের খাবার খাওয়ার সময় চেষ্টা করুন ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরতে, যাতে পেটের ওপর সেটা আঁটোসাঁটো হয়ে লেগে না থাকে। দুপুরের খাওয়ার পর চেষ্টা করুন ৫ মিনিট বজ্রাসনে বসে থাকতে, যা আপনার হজমে সহায়তা করবে। খাওয়ার সময় পা ভাঁজ করে সুখাসনে বসে খেলে খাবার তাড়াতাড়ি হজম হয়। খাওয়ার পর দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পা ছড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আশপাশের শব্দ মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করলে হজম ভালো হয়। অন্তত আধঘণ্টা পর সম্ভব হলে শবাসন করতে পারলে উপকার হবে।
মনোযোগ দিয়ে খাবার ভালো করে চিবিয়ে না খাওয়া
খাওয়ার সময় টিভি দেখা বা মুঠোফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এটা মনোযোগকে বিনষ্ট করে হজমকে বাধাগ্রস্ত করে। খাবার গলায় আটকেও যেতে পারে। বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার।
উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে দ্রুত ওজন কমবে।