ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নরওয়েপ্রবাসী ও নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এতে সাঈদ উদ্দিন (৩০) নামে প্রবাসী যাত্রীসহ এক নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন। গত বুধবার রাত সোয়া ৯টায় বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনি কেনোপি-২-এর সামনে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, আহত ওই প্রবাসী যাত্রীর বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। এদিকে এরই মধ্যে প্রবাসী যাত্রী ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীর মধ্যে হাতাহাতির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে প্রবাসী যাত্রী সাঈদ উদ্দিনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বাগ্বিতন্ডার একপর্যায়ে সাঈদ উদ্দিন বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিমান বাহিনীর এক সদস্যকে ধাক্কা দিলে হাতাহাতি শুরু হয়। পরে তাকে নিবৃত্ত করেন এভসেক সদস্যরা। শেষে বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তাকে ছেড়ে দেন। বিমানবন্দরের নির্বাহী হাকিম মো. ফারুক সুফিয়ান ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দন্ডবিধির ১৮৯ ধারায়

সাঈদ উদ্দিনকে জরিমানার আদেশ দেন। এ ধারায় সরকারি কর্মচারীকে হুমকি কিংবা তার কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোর্চ্চ দুই বছরের জেল বা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডের বিধান আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, হাতাহাতির পর ওই প্রবাসীর চোখে জখম হয়েছে, তার ঠোঁট ফেটে গেছে এবং গালেও আঘাত পেয়েছেন তিনি। বিমান বাহিনীর যে সদস্যকে তিনি ধাক্কা দিয়েছেন, তার নাম কোহিনূর। তিনিও আহত হয়েছেন। তার চোখ ফুলে গেছে। ওই ভিডিওতে প্রবাসীকে লক্ষ্য করে কোহিনূরকে বলতে শোনা যায়, ‘কাজটা ভালো করেন নাই। আপনি আমাকে কেন ধাক্কা দিলেন, কেন ধাক্কা দিলেন? আমি সিভিল লোক?’ জবাবে সাঈদ তার সঙ্গে আসা এক স্বজনকে দেখিয়ে বলতে থাকেন, ‘আপনি উনাকে ধরেন নাই? ধরেন নাই? আপনারা পাঁচজন-ছয়জন মিলে মারছেন ওরে।’ তখন বিমান বাহিনীর ওই সদস্য বলেন, ‘সিসিটিভি আছে, দাঁড়ান।’ বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম একটি লিখিত বক্তব্য পাঠান। তাতে বলা হয়, ৮ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক আগমনি কেনোপি-২-এর সামনে দুজন সম্মানিত যাত্রী কর্তৃক বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সদস্যকে শারীরিকভাবে আঘাতের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, পাঁচজন যাত্রীর একটি দল বিমানবন্দরের কার্যক্রম শেষ করে কেনোপি-২ এলাকা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন ট্রলিসহ কেনোপি-২-এর গেটের সামনে দাঁড়ালে ওই গেটে যাত্রীর পথ আটকে যায়। ওই সময় ওই এলাকায় আগমনি যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কর্তব্যরত একজন নিরাপত্তাকর্মী ওই যাত্রীকে কিছুটা সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত না করে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পর ওই নিরাপত্তাকর্মী পুনরায় ওই যাত্রীকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে গেলে তিনি প্রচ- রাগান্বিত হয়ে পড়েন এবং অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় ওই নিরাপত্তাকর্মীকে গালাগাল করতে থাকেন।

বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ সময় সেখানে নিয়োজিত আরও একজন নিরাপত্তাকর্মী উল্লেখিত যাত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করলে একপর্যায়ে উল্লেখিত যাত্রীর পুত্র (একই ফ্লাইটের যাত্রী, যিনি পেছনে অবস্থান করছিলেন) ঘটনাস্থলে এসে বিমান বাহিনীর ওই নিরাপত্তাকর্মীকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছিত করেন। যাত্রীরা ওই নিরাপত্তাকর্মীকে কিলঘুসি মারা শুরু করলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয় এবং ওই নিরাপত্তাকর্মী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিমানবন্দরে নিয়োজিত আনসার এবং অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা এগিয়ে এলে ওই নিরাপত্তাকর্মীদের উল্লেখিত দুজন যাত্রীর হাত থেকে মুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে প্রবাসী সাঈদ উদ্দিনের বক্তব্য জানা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *